- নির্বাচন কমিশনের নিকট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবসমূহ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অধিকতর সুষ্টু, নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য করার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রস্তাবসমূহ নিম্নরুপঃ
১। ইংরেজী ভাষায় প্রণীত “ the Representation of the people order, 1972’’ ও ‘’ The Delimitation of constituencies ordinance, 1976’’ এর বাংলা সংস্করণ প্রণয়নের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে (RPO এর অনুচ্ছেদ ৯৪/এ অনুসরণ যোগ্য)
২। নির্বাচনে অবৈধ অর্থ এবং পেশীশক্তির ব্যবহার রোধকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও বিবিধমালা নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
৩। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত এবং নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি বা সংস্থার অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪। নির্বাচন পরিচালনায় কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।
৫। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের বাছাই করে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী চুড়ান্ত করা।
৬। নির্বাচন পর্যবেক্ষনের ক্ষেত্রে দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা। কোন ভাবেই কোন বিশেষ দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যশীল হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন প্ররযবেক্ষণে দায়িত্ব প্রদান না করা।
৭। নির্বাচনের দিন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সকল গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান। গণমাধ্যম কর্মীদের উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান ও তাদের দায়িত্ব কর্ম এলাকা নির্ধারণ করা।
৮। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়োজিত পোলিং এজেন্টদের তালিকা ছবিও NID সহ (কেন্দ্র ভিত্তিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমপক্ষে ০৩ দিন পূর্বে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রদান নিশ্চিত করা এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভোট কক্ষে প্রবেশ ও নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা।
৯। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সাথে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের ন্যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইভিএম’ এর মাধ্যমে ভোটদান প্রবর্তন করা।
১০। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর ন্যস্ত থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৯-১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালায় In aid to civil power শিরোনামে সুস্পষ্ঠভাবে তার উল্লেখ রয়েছে।
১১। Delimitation বিষয়টি জনসংখ্যা বিশেষ করে আদমশুমারীর সাথে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারীর উপর ভিত্তি করে ( যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত) ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্বে Delimitation করা হয়েছে। নতুন আদমশুমারী ব্যতীত পুনরায় Delimitation কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতা সৃষ্ঠি হতে পারে।
২। নির্বাচনে অবৈধ অর্থ এবং পেশীশক্তির ব্যবহার রোধকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও বিবিধমালা নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
৩। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত এবং নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি বা সংস্থার অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪। নির্বাচন পরিচালনায় কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।
৫। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের বাছাই করে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী চুড়ান্ত করা।
৬। নির্বাচন পর্যবেক্ষনের ক্ষেত্রে দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা। কোন ভাবেই কোন বিশেষ দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যশীল হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন প্ররযবেক্ষণে দায়িত্ব প্রদান না করা।
৭। নির্বাচনের দিন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সকল গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদান। গণমাধ্যম কর্মীদের উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান ও তাদের দায়িত্ব কর্ম এলাকা নির্ধারণ করা।
৮। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়োজিত পোলিং এজেন্টদের তালিকা ছবিও NID সহ (কেন্দ্র ভিত্তিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমপক্ষে ০৩ দিন পূর্বে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রদান নিশ্চিত করা এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভোট কক্ষে প্রবেশ ও নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা।
৯। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সাথে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের ন্যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইভিএম’ এর মাধ্যমে ভোটদান প্রবর্তন করা।
১০। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর ন্যস্ত থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৯-১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালায় In aid to civil power শিরোনামে সুস্পষ্ঠভাবে তার উল্লেখ রয়েছে।
১১। Delimitation বিষয়টি জনসংখ্যা বিশেষ করে আদমশুমারীর সাথে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারীর উপর ভিত্তি করে ( যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত) ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্বে Delimitation করা হয়েছে। নতুন আদমশুমারী ব্যতীত পুনরায় Delimitation কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতা সৃষ্ঠি হতে পারে।
বিজ্ঞ কমিশন নিশ্চয়ই অবগত রয়েছেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমতাবস্থায় ৩০০ আসনের Delimitation এর মত একটি জটিল কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যেসব আইনানুগ পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকে; তথা খসড়া থেকে আপীল নিষ্পত্তি পর্যন্ত যে মহা কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয় তা সময় স্বল্পতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অত্যাবশ্যক। কমিশনের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের অনেকগুলো নির্বাচন রয়েছে। সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করছি।
নির্বাচন কমিশনের নিকট আকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব
তারিখঃ ১৮ অক্টোবর, বুধবার, সকাল ১১-০০টা
গনতন্ত্র ও নির্বাচনঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্নগবাদিত নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃজন করতে শুরু করেন। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে ‘গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ প্রণয়ন করে দেশ পরিচালনা ও মানুষের অধিকার সংরক্ষণের সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত বিধান নিশ্চিত করেন। এই সংবিধানে Executive, Legislative ও Judiciary এমনকি বর্তমান সময়ের Media ও Civil Society সহ প্রতিটি বিভাগের জন্য সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা সন্নিবেশিত হয়, যার আলোকে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সকল সংস্থা গঠিত ও পরিচালিত হতে থাকে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ই ১৯৭২ সালে প্রণীত The Representation of the People Order সহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়, যার অধীনে ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ের মধ্যেই ধারাবাহিকভাবে দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান সুসংগঠিত হয়ে উঠতে শুরু করে। গনতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের প্রতিটি পর্যায়ে কাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত অপশক্তি ও তাদের এদেশীয় দোসররা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্তব্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা। খুনিচক্রের এই ভয়াবহতম নৃশংসতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সকল মানুষ বাকরুদ্ধ ও হতভম্ব হয়ে পরেন।
- এই হত্যাকান্ডের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের হোতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও সেনা আইন লংঘন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষনা করেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সকল প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন। শুরু হয় স্বৈরশাসনের। এই স্বৈরশাসক তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন এবং তার পক্ষে হ্যাঁ ভোট প্রদানের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। জনগণের ভোতাধিকার হরণ ক্রে তার নিয়জিত সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচারে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে তোলে। প্রহসনের এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সাধারন মানুষ যেমন তাদের ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলেন অপরদিকে সকল গনতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যায়। এই ধারাবাহিকতায় অব্যাহত থাকে ১৯৯০ সালের ০৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যখন জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরন করে ক্ষমতা দখলকারী অপর স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মাদ এরশাদ এর শাসনকালের অবসান ঘটে।
১৯৮১-১৯৯১ সাল পর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনকে সঙ্গে নিয়ে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার যে সংগ্রাম করে আসছিলেন স্বৈরশাসনের অবসানের মধ্যে দিয়ে তার প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়। জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার পরিচালনায় রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসন ব্যাবস্থা থেকে সংসদীয় গনতন্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন ঘটে। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর কার্যকর প্রতিফলন ঘটতে শুরু করে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হতে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের পর সাবেক স্বৈরাচারের রাজনৈতিক দল বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী’র সমর্থনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়। জনমানুষের নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই বেগম জিয়া তার স্বামী স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আবারও কলুষিত করে তোলেন। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।
- ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ঢাকা (মিরপুর ও তেজগাঁও) ও মাগুরার উপ-নির্বাচনে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী, অনুষ্টিত সকল রাজনৈতিক দল কতৃক বর্জিত ও ভোটার বিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে নজিরবিহীন কারচুপি ও অন্যায় সংঘটিত হয় তা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল কতৃক বর্জিত ও ভোটার বিহীন এই অবৈধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনীদের রাজনৈতিক দল ( যা বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত) ফ্রিডম পার্টিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসায়। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে বিএনপি নির্বাচন ও গনতান্ত্রীক রাষ্ট্র ব্যবস্থার সকল কিছুই ধ্বংস করে দেয়। ফুঁসে উঠে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে বেগম খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ ১৯৯৬ ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে পুনরায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্টিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এই প্রথম দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরের কার্যকর পুনঃগঠন শুরু হয়।
একটি স্থায়ী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় গুনগত পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনের অপশাসনের প্রতিবন্ধকতা অপসারন করে সম্মুখ পথে অগ্রসর হওয়া ছিলো খুবই কষ্টকর। স্বাধীনতা-বিরোধী পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে ২০০১ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কতৃক গৃহীত সকল উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়ে দেশকে আবারও পিছন দিকে ঠেলে দেয়।
২০০১ সালের ১লা অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এ সময় নির্বিচারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে এমন সকল ভোটার বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এক নারকীয় তান্ডব চালানো হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় তাদেরকে নির্বাচনী এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়। অনেক নেতাকর্মীকে পঙ্গু এবং মারাত্মকভাবে জখম ও হত্যা করা হয়। অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন জনমনে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার করা হয়, অপরদিকে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে এমন ব্যক্তিদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কেবলমাত্র ‘নৌকা’ প্রতীকে ভোট দেয়ার অপরাধে, ক্ষেত্র বিশেষে শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় দিয়ে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, এবং সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, খুলনাসহ দেশের প্রায় সকল জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যসহ আওয়ামী নেতা-কর্মীদের উপর এক বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
- এসময় শিশু পুর্ণিমা, রাজুফা, ফাতেমা, মাহিমাসহ অগণিত নারী ও শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নাম দিয়ে সেনা বাহিনী ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে এমন জনমানুষের উপর নির্বিচারে অত্যাচার ও অনেককে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়।
- ২০১০ সালে মহামান্য আদালতের নির্দেশনায় বিএনপি-জামাত কর্তৃক পরিচালিত নারকীয় তান্ডবের বিষয়ে তদন্ত করে দেখার জন্য একটি বিশেষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়-
- ২০০১ সালের ০১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি- জামায়াত এর চার দলীয় জোটের সন্ত্রাসী দ্বারা ৪৩ জেলায় ৬২টি স্থানে ৩৪২ জন শিশুকে ধর্ষন, নির্বিচারে গণধর্ষন, লুন্ঠন, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলার মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ জায়গায় নারী ও শিশু কন্যাদের টার্গেট করে হামলা চালানো হয় এবং জমি, বসতবাড়ি ও দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়া হয়।
- বাগেরহাটের ফকিরহাটে বাবা-মার সামনে ১৩ বছরের একটি মেয়েকে ২২ জন ধর্ষন করে হত্যা করে। কত বীভৎস ও পাশবিক হতে পারে তাদের নির্মমতা, তা এই একটি ঘটনার মধ্য দিয়েই ফুটে উঠে।
- তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে ৩৬২৫টি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৩৫৫টি খুন এবং ৩০০০ এর উপর ধর্ষন, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এর এই বর্বরতা তাদের অবশিষ্ট শাসনকালেও অব্যাহত থাকে। ২০০৩-২০০৬ পর্যন্ত প্রায় ১৪,০০০ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২০০১ সালের ০১ অক্টোবর নির্বাচনে সীমাহীন কারচুপি ও নির্বাচন পরবর্তী পৈশাচিকতার বিষয়ে “A Rigged Election and an Illegitimate Government (Bangladesh election 2001) " এবং “Valley of Death” সহ অনেক গ্রন্থে এর মর্মস্পর্শী বিবরণ রয়েছে যা ঐ সময়কার বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে ব্যপক প্রচারিত হয়।
- কার্যত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা না থাকায় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে জনমানুষকে এই নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।
- ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনকালে একদিকে যেমন সারাদেশে ‘বাংলা ভাই’ এর নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা তার স্বরূপে আবির্ভূত হয়, অপরদিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কালো ছায়ায় বাংলাদেশ প্রায় একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ২০০১ সালের ন্যায় কারচুপির মাধ্যমে পরবর্তী জাতীয় সংসসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভূয়া ভোটার দিয়ে বিএনপি-জামাত জোট যে ভোটার তালিকা তৈরী করে তা ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নিকৃষ্ট প্রহসন।
- এমনকি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের চিহ্নিত ব্যাক্তিদের বিশেষ উদ্দেশ্যে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদানসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের চরম অপব্যবহার করে বাংলাদেশের সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকেই বিনষ্ট করে দেয়া হয়।
কিন্তু আবারও ব্যাপক গনআন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের পতন ঘটে এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনকালে (২০০১-২০০৬) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল এবং মহাজোটের অন্যান্য শরিকদল নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে একটি অভিন্ন রূপরেখা ঘোষনা করেন। এই রুপরেখায় নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা এবং নির্বাচনী আইন্ন ও বিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে মোট ৩০ দফা সুপারিশ করা হয়।
এই সব প্রস্তাব সকল প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও আলোচিত হয়। প্রস্তাব সমূহের প্রতি দেশপ্রেমিক সকল নাগরিক ও সুশীল সমাজ আকুন্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। জনগনের দাবীর মুখে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলকে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবগুলি উত্থাপন করেন। তারপর সুদীর্ঘ সময় সরকার নানা কুট-কৌশলের মাধ্যমে কালক্ষেপন করতে থাকে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি’র মহাসচিব এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করার সব রকম প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু দেশী-

Commentaires
Publier un commentaire